স্বদেশ ডেস্ক:
প্রযুক্তি দুনিয়া এতটাই এগিয়ে গেছে যে, এখন মানুষের জায়গা দখল করে নিয়েছে যন্ত্র। মানুষের মতো করেই এসব যন্ত্র সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আর এই প্রযুক্তিকে বলা হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় সাফল্য মনে করা হয় এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে। তবে এটি ব্যবহারে সতর্কও করছেন প্রযুক্তিবিশ্বের মোড়লরা। বিস্তারিত জানাচ্ছেন আজহারুল ইসলাম অভি
টেসলার প্রধান নির্বাহী ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক দীর্ঘদিন ধরেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের বিপদ নিয়ে সতর্ক করে আসছেন। প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট বিজনেস ইনসাইডারের তথ্য অনুযায়ী এর আগেও মাস্ক সতর্ক করেছিলেন এ ব্যাপারে। তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়ন ঝঁসসড়হরহম ঃযব উবসড়হ অর্থাৎ দৈত্য ডেকে আনার শামিল আখ্যায়িত করে এটিকে মানবজাতির জন্য সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হুমকি হিসেবে অভিহিত করেছেন। এটিকে আণবিক বোমার চেয়েও অধিক বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নে নিয়ন্ত্রণ আরোপের আহ্বান জানান। তার অন্যতম উদ্বেগ হচ্ছে, এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানবকর্মীর জায়গা নিয়ে নেবে। এ ছাড়াই নেটের মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এক সময় সিদ্ধান্ত নেবে মানুষের আর কোনো প্রয়োজন নেই।
বিজনেস ইনসাইডার মাস্ক বলেছেন, ‘এক দশক ধরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিপদের কথা বলে যাচ্ছি।’ নতুন করে তিনি সতর্ক করে বলেন, যেসব স্মার্ট ব্যক্তি মনে করেনÑ তাদের যন্ত্র কখনো বোকা বানাতে পারবে না, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। তাদের পথে আসা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কোনো চাতুরী থেকে সুরক্ষার প্রভাব কমাচ্ছে।
বিজনেস ইনসাইডারকে মাস্ক বলেন, এআই কোথায় যাচ্ছে- এ সম্পর্কে আমাদের উদ্বেগ জানানো উচিত। যারা বেশি স্মার্ট, তাদেরই এআই নিয়ে বেশি ভুল করতে দেখি। কারণ তারা ভাবতে পারেন না, তাদের চেয়ে কম্পিউটারের বুদ্ধি বেশি হতে পারে। তাদের যুক্তির এখানেই বড় ত্রুটি। তারা নিজেদের যতটাই স্মার্ট ভাবেন, আসলে তারা এর চেয়ে বোকা বেশি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কীভাবে এর ¯্রষ্টাকে অতিক্রম করতে পারে এবং তা মানবজাতির জন্য হুমকি বয়ে আনতে পারে, এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়ন কৌশল এমন স্তরে পৌঁছবেÑ যাতে মানুষের সাহায্য ছাড়াই এগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজেদের উন্নতি ঘটাতে পারবে। আর যদি এমনটি ঘটে, তা হলে আমাদের বুদ্ধিমত্তার বিস্ফোরণের সম্মুখীন হতে হবে। ফলে যান্ত্রিক বুদ্ধি আমাদের অতিক্রম করবে।
এর আগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে মাস্কের সঙ্গে ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গের বাদানুবাদও হয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যৎ নিয়ে ইলন মাস্ক আর মার্ক জাকারবার্গের অবস্থান বরাবরই বিপরীতমুখী।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী প্রতিষ্ঠান গুগলের প্রধান নির্বাহী সুন্দর পিচাই সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারে বিপর্যয়ের আশঙ্কার কথা বলেছেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার রুখতে নির্দিষ্ট নীতিমালা মেনে চলা। আর কীভাবে প্রযুক্তির অপব্যবহার হতে পারে, তা নিয়ে আগেই ভাবা উচিত। শুধু নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও উন্নয়ন করলেই চলবে না, ওই প্রযুক্তির ব্যবহার যেন মানবসভ্যতার বিপক্ষে না যায়Ñ এ বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে।’